Salsaabil On Shob I Barat Bangla Dock@sakisabre Poem by SAKISABRE Saki

Salsaabil On Shob I Barat Bangla Dock@sakisabre

“শবে বরাত” হচ্ছে ফারসী শব্দ
যা আরবী “শাবান” থেকে আগত
তবে কি কোরআনে পাওয়া যাবে..?
পবিত্র শবে বরাতের আলোচনা করা হয়েছে
সিহা সিত্তার সহি মুসলিম, সহি ইবনে দাউদ, সহি নাসাই, শুনানে ইবনে মাজা সহ অন্যান্য অনেক অনেক হাদিস গ্রন্থে পবিত্র শবে বরাতের মহিমা আর এর ফজিলত এসেছে
সিহা সিত্তার সব হাদিসে পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত বর্ণনা থাকার পরেও কিছু মুসলমান কেন এর বিরোধীতা করে
আর অপপ্রচার চালায় যে শবে বরাত বিদাত, হারাম..?
মিথ্যার একটু সীমা থাকা দরকার...
আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের অপপ্রচার
দলিলের আকারে দলিল পেশ করছি
তাফসীরের আলোকে শবে বরাতঃ
১. প্রসিদ্ধ তাফসীরে কুরতুবী রয়েছে,
ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-
অর্থ: ইমাম কুরতুবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে- (ক) . লাইলাতুম মুবারাকা, (খ) . লাইলাতুল বারাআত, (গ) . লাইলাতুছ্ ছাক (ঘ) . লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬ পৃষ্ঠা-১২৬)
২. তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنهما أن الله يقضى الأقضية فى ليلة النصف من شعبان, ويسلمها إلى أربابها فى ليلة القدر-
অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন । (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)
এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নাম-
(১) .তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪। (২) .তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০। (৩) .তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪। (৪) .তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০। (৫) .তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২। (৬) .তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২। (৭) . তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (৮) . তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২। (১০) . তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (১১) . তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯। (১২) . তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩। (১৩) . তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬। (১৪) . তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩। (১৫) . তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪। (১৬) . তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬। (১৭) .তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭। (১৮) . তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২। (১৯) . তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬। (২০) . তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১। (২১) . তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০। (২২) . তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৩) . তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৪) . তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৫) . তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০, (২৬) . তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০। (২৭) . তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৮) . তাফসীরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৯৮। (২৯) . তাফসীরে কাশেফুল আসরার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৮ পৃষ্ঠা। (৩০) . তাফসীরে মাওয়ারদী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২। (৩১) . তাফসীরে সিরাজুম মুনির, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৮। (৩২) . কান্যুল ঈমান শরীফ।
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীল দলীল নং: ১
عن ابى موسى الاشعارى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن) رواه ابن ماجه (
অর্থ: হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।
{তথ্য সূত্র: (১) .ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০, হাদীস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫। (২) . ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৮২। (৩) .ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদীস নং-২৯। (৪) .মিসবাহুজ জুজাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪২, হাদীস নং-৪৮৭। (৫) .আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩য়, হাদীস নং-২৭১৮। (৬) .
আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩১ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে।}
দলীল: ২
عن معاذ رضى الله عنه: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يطلع الله فى ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن
অর্থ: হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত: পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।
{তথ্য সূত্র: (১) . ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮৩৩। (২) .সহীহ ইবন হিব্বান, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৫৫, হাদীস নং ১৯৮০। (৩) .আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীহা”এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩৫, হাদীস নং-১১৪৪। (৪) .মুজামুল কাবীর, খণ্ড-১৫, পৃষ্ঠা-২২১। (৫) .ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১১৯, হাদীস নং-২২। (৬) .আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১।
এছাড়া পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসটি যেসব গ্রন্থে এসেছে।
- ইমাম বায়হাকী ‘শুবুল ইমান, ৩য়খন্ড, পৃ-৩৮০, ৩৮২, ৩৭৯, হাদিস-৩৮২২, ৩৮২৭)
- মুসনাদে আহমাদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮তম খন্ড-, পৃস্ঠা- ২৩৮, ১১৪, হাদিস-২৫৯৬, ১৬৮২ (২১টি হাদিস রয়েছে)
- ‘ফাজায়েলুল আওকাত পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদিস- ২৫
- ‘মিসবাহুজ জুজযাহ, ১ম খন্ড, পৃ-৪৪২, হাদিস-৪৮৭, ৪৮৬
- ‘আত তারগীব ওয়াত তারহীব’ তৃতীয় খন্ড, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা-২৪০ হাদিস-২৭১৮, ২৪, ২৭৬৯
- আহলে হাদিসদের গুরু নাসির উদ্দিন আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা’ ৩য় খন্ড, পৃ-১৩১, ১৩৫
- মাছাবাতাবিচ্ছুন্নাহ, পৃ-৩৫৪
- মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৬৫
- মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা- ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ৪৩৮, হাদিস- ৯৯০৭।
- শরহুসসুন্নাহ ৪র্থ খন্ড- পৃষ্ঠা-১২৬, হাদিস- ৯৯২,
- আল মুনতাখাব মিনাল
- ইবনে হিব্বান, খন্ড-১৩, পৃস্ঠা-৩৫৫, হাদিস-১৯৮০
- শুয়াবুল ঈমান- ৩য় খন্ড, পৃ-৩৭৯, ৩৮০ হাদিস- ৩৮২২, ৩৮২৭
এছাড়া রয়েছে আরো অনেক অনেক হাদিস- যেখনে পবিত্র শবে বরাতের মহিমা প্রকাশ পেয়েছে
তাহলে আজকের যুগে যুব্বা পড়া এরা কারা, মাথায় ওড়ানা আর...... উদ্দেশ্যবা কি যে তারা এতগুলো অসংখ্য হাদিস থাকার পরেও আজ বিভিন্ন ওয়াজে, টিভিতে বসে কথা উড়াচ্ছে যে ইসলামে শবে বরাত বলে কিছু নাই, শবে বরাত পালন একটি বিদাত, হারাম ইত্যাদি..?
পাঠক দেখলেনতো পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে কতগুলো গ্রন্থে, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে..
তবে শবে বরাত উপলক্ষে কিছু আজব রীতি দেখা যায় যেমন পটকা, আতশবাজী ইত্যাদি, এটা এই পবিত্র রাতে ইবাদতে মারাত্বক বিঘ্ন সৃষ্টি করে
যারা পটকা বাজী করে তাদের মাঝে সচেতনতা প্রচার প্রয়োজনে
পবিত্র দিনের সাথে এই বানানো আতশবাজীর কোন সম্পর্ক নেই
পবিত্র দিনে আমাদের যেসব করণীয়.....
* শা’বান মাসকে রাসূল (দ.) নিজের মাস বলেছেন; তাই উম্মতের উচিত এ মাসে বেশী করে দরূদ শরীফ পড়া।
* অসংখ্য হাদীস শরীফে এ মাসে রোযার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে, তাই বেশী করে রোযা পালন করা যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অধিক প্রিয় আমল ছিল।
* বেশী করে দান সদকা করা যা সাহাবা ও বুযুর্গানেদ্বীন (রহ.) -এর আমল ছিল। হাদীস শরীফেও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
* ‘‘লায়লাতুল মোবারাকা’’ বলতে যেহেতু শবে বরাতকে বুঝানো হযেছে তাই এরাতে অধিক ক্বোরআন তিলাওয়াত করা।
* সূরা ইয়াসিন তিন বার পাঠ করলে রিযিক বৃদ্ধি পায় বলে অভিমত রয়েছে।
* হাদীস শরীফে রাত্রি জাগরণ থেকে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে, তাই সারা রাত নফল নামাযের মাধ্যমে রাত্রি যাপন করা।
*সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে যিয়ারত করার দলিল রয়েছে বিধায় এরাতে কবর যিয়ারত করা।
* সন্ধ্যায় সওয়াবের নিয়তে গোসল করা।
* রোযা রেখে ইফতারের সময় নবীর (দ.) উপর ৩ বার দরূদ শরীফ পড়া।
নবীর সঃ প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম!


(edited from== গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ)


১৪ই শা'বান দিবাগত রাতটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত
কিন্তু অনেকে বলে থাকে কুরআন-হাদীছের কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই
শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় শবে বরাত শব্দ দু'টি যেরূপ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই তদ্রূপ
নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই
শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফে না থাকার কারনে ছেড়ে দিবে?
মূলত শবে বরাত, নামায, রোযা, খোদা, ফেরেশতা, পীর ইত্যাদি ফার্সী ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত
ফার্সী শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি
সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত
মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত কুরআন শরীফে আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত কুরআন শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান বা শা'বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

অর্থঃ
“শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।'
(সূরা দু'খানঃ ২-৫)
কেউ কেউ বলে থাকে যে, 'সূরা দু'খানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি........
আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।'
এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
' মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শা'বান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।'
(ছফওয়াতুত তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ড, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, রুহুল বয়ান, আবী সাউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামলালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ দুরার, মাদারিক)
লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু'খানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ। এই আয়াত শরীফের يُفْرَقُ শব্দের অর্থ ফায়সালা করা।প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়, ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়, ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়
কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।
(তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযীন, তাফসীরে ইবনে কাছীর, বাগবী, কুরতুবী, রুহুল বয়ান, লুবাব)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যে সুরা দু'খান-এ বলেছেন, ' আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ' এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল ' আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি '
আর সুরা ক্বদর-এ ' আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ' এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল ' আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি '
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন।
হাদীছ শরীফেও শবে বরাতে সমর্থন পাওয়া যায়। হাদীছে শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
'হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আপনি কি জানেন, লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান বা শবে বরাতে কি সংঘটিত হয়? তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ রাত্রিতে কি কি সংঘটিত হয়? আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ আল্লাহ পাকের নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা হয়'।
(বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে, 'হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাতযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়া রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন? আমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন'।
(বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে, ' হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষনা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত।'
(ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,
'হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন'
(ইবনে মাযাহ্, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি শা'বানের মধ্য রাতে (শবে বরাত) ইবাদত করবে তারই জন্য সুসংবাদ এবং তার জন্য সমস্ত কল্যাণ'
হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,
'আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে এবং অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির অন্তর ঐদিন মরবে না বা পেরেশান হবে না যে দিন সকলের অন্তর পেরেশান থাকবে'।
(মুকাশাফাতুল কুলুব)
শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
'আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে দোয়া করলে তা রদ বা বাতিল হয়না । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) জুমুয়ার রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত'।
(দায়লামী শরীফ)
শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
'আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা'বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত
(মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহ, গুনইয়াতুত্ ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব)
সুতরাং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
অনেকে উপরে উল্লেখিত শবে বরাত সম্পর্কিত কিছু হাদীসকে দ্বয়ীফ বলে শবে বরাতকে বিদায়ত বলে থাকেন। দ্বয়ীফ হাদীছের ব্যাপারে নিচে আলোচনা করা হলঃ
দ্বয়ীফ হাদীছঃ
যে হাদীছের রাবী হাসান হাদীছের রাবীর গুণ সম্পন্ন নন তাকে দ্বয়ীফ হাদীস বলা হয়।
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কথাই দ্বয়ীফ নয় বরং রাবীর দুর্বলতার কারণে হাদীছকে দ্বয়ীফ বলা হয়।
দ্বয়ীফ হাদীসের দুর্বলতার কম বা বেশী হতে পারে। কম দুর্বলতা হাসানের নিকটবর্ত্তী আর বেশি হতে হতে মওজুতে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের হাদীছ আমলে উৎসাহিত করার জন্য বর্ণনা করা যেতে পররে বা করা উচিৎ। তবে আইন প্রণয়নে গ্রহনযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
'দ্বয়ীফ হাদীছ যা মওজু নয় তা ফজিলতের আমল সমূহে গ্রহণযোগ্য'
(ফতহুল ক্বাদীর)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বিহ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
'সকলেই একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে।'
(আল মওজুআতুল কবীর, ১০৮ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হল যে, দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। তবে দ্বয়ীফ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত সকল আমল মুস্তাহাব।
যেমনঃ আল্লামা ইব্রাহিম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গুলিয়াতুল মুস্তামালী ফি শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লি কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
'গোসলের পরে রূমাল (কাপড়) দিয়ে শরীর মোছা মুস্তাহাব। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে - আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটুকরা কাপড় (রূমাল) ছিল যা দিয়ে তিনি অযুর পরে শরীর মুবারক মুছতেন' (তিরমিযি শরীফ)
এটা দ্বয়ীফ হাদীছ। কিন্তু ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা যাবে।
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল মওজুআতুল কবীরের ১০৮ পৃষ্ঠায় বলেন,
'সকলে একমত যে দ্বয়ীফ হাদীছ ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। এজন্য আমাদের আইম্মায়ি কিরামগণ বলেছেন, অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা মুস্তাহাব।'
তার মানে অযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা -এটি দ্বয়ীফ হাদীছ।
সুতরাং যারা শবে বরাতের হাদীস সংক্রান্ত কিছু দলিলকে দ্বয়ীফ হাদীছ বলে শবে বরাত পালন করা বিদায়াত বলে তাদের এধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভূল।


Edited from the status of ___ Nasir Al Bari

Tuesday, June 2, 2015
Topic(s) of this poem: religious
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success