​ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে (Depression) Poem by Arun Maji

​ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে (Depression)

Rating: 5.0

ছোট্ট এক শহরে দুই যমজ ভাই​ ছিলো। ​তাদের একজন নেশাখোর দুর্বৃত্ত​, ​ অন্যজন ধার্মিক সমাজসেবী। দুই যমজ ভাইয়ের ভিন্ন ব্যক্তিত্বে আশ্চর্য্য হয়ে, শহরের এক সাংবাদিকের বড় কৌতূহল হলো। ব্যাপারটা ​তিনি ​একটু খুঁটিয়ে ​দেখতে চাইলেন।

​একদিন ​সাংবাদিক​টি নেশাখোর ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন-
​"​তুমি যা করো, তা কেন করো? ​"​
নেশাখোর ভাই​টি উত্তর দিলো-
"আমি যখন খুব ছোট্ট​ ছিলাম, তখন দেখতাম​- বাবা মদ খেয়ে, আমার মাকে মারতো আর খিস্তি ​করতো। আমিও ​তাই আমার বাবার ​মতো হয়ে গেলাম। "

সাংবাদিক​টি তারপর ধার্মিক ভাইকে জিজ্ঞেস ​করলেন-
​"​তুমি যা করো, তা কেন করো? ​"​
ধার্মিক ভাই​টি উত্তর দিলো- ​
"আমি যখন খুব ছোট্ট​ ছিলাম, তখন দেখতাম​- বাবা মদ খেয়ে, আমার মাকে মারতো আর খিস্তি ​করতো। আমি ​তখন ​প্রতিজ্ঞা ​করলাম- কখনোই ​আমি, ​আমার বাবার মতো হবো না।"

দুই ভাই ​কিন্তু ​একই রকম যন্ত্রণা ​পেয়েছে। দুজনেই চোখের সামনে দেখেছে- বাবা ​তাদের ​মদ খেয়ে কেমন নৃশংস ভাবে​, ​ মায়ের উপর অত্যাচার করতো। ​যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে, ​একজন​ ​ছাই হয়ে ​গেলো। আর অন্যজন হীরের মতো জ্বলতে শুরু করলো।

এ গল্প ​অরুণ মাজী ​তোমাদেরকে আজ বলছে কেন?
অরুণ মাজী ​তোমাদেরকে বোঝাতে চাই​-​ আঘাত আর যন্ত্রণা ​কিন্তু এক কথা নয় । শরীরে ​বা মনে তুমি যেটা পাও, সেটা আঘাত। ​সেই আঘাত তোমার মনের মধ্যে যে কষ্ট আনে, তা হলো যন্ত্রণা। ​

আঘাত এক হলেও, যন্ত্রণা ​কিন্তু ​আলাদা ​হয়। ​তুমি যখন খুশি ​থাকো, তোমাকে তোমার বন্ধু চাঁটি মারলে, ​তুমি রাগ করো না। ব্যাপারটা তুমি হেসে উড়িয়ে দাও। কিন্তু তুমি যদি ​ইতিমিধ্যেই ​অসুখী ​থাকো, তোমার বন্ধু তোমাকে চাঁটি ​মারলে, তাকে ​তুমি খিস্তি​ করো, বা দু-ঘা ​লাগিয়ে ​দাও। একই ​চাঁটি। কিন্তু ​এরূপ ​পৃথক ফল কেন? যমজ ভাইয়ের গল্পেও ​তোমরা ​দেখলে​-, একই আঘাত​, ​ কিন্তু পৃথক ফল। এমন কেন হয়?

আঘাত আর যন্ত্রণার মাঝে ​ছোট্ট একটা জায়গা ​রয়েছে। সেই জায়গাতে রয়েছে ​তোমার নিজের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা। ​তোমার বাবার পশুত্ব দেখে, ​তুমিও একটা পশু হবে​, বা পশুত্ব ​ত্যাগ করে তুমি একটা দেবতা হবে- সেটা তোমার নিজের পছন্দের ব্যাপার। ​

​একই যন্ত্রণায় আবিষ্ট হয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পথ ​বেছে ​নেয়। ​পথের সেই ভিন্নতার কারনে- কেউ যন্ত্রনায় পুড়ে ছাই ​হয়। কেউ আবার যন্ত্রনায় পুড়ে খাঁটি সোনার মতো জ্বলতে থাকে।

জীবনে আঘাত অনিবার্য। কিন্তু যন্ত্রণা অনিবার্য নয়। যন্ত্রণার লাঘব বা প্রতিরোধ ​​ভীষণই সম্ভব। ​ধরো, তুমি ​চাকরীহারালে। তাতে ​তুমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে মদ খাওয়া শুরু করবে, বা আত্মহত্যা করবে​, বা কাপড়ের দোকান খুলে ব্যবসার মাধ্যমে বড় এক শিল্পপতি হতে চাইবে- সেই বেছে নেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু ​তোমার নিজের হাতে। ​তোমার সেই বেছে নেওয়ার ক্ষমতা​, ​ ​তোমার জীবনের ​সাফল্য বা ব্যর্থতা গড়ে দেবে।

ডিপ্রেশান বা মানসিক অবসাদ ব্যাপারটা খুব ​জটিল। এখন​ও ​অনেক ​রকম ​গবেষনা চলছে। তবুও বলতে হয়​-​ কিছু মানুষ আঘাত পেলে, যন্ত্রণাকে নিমন্ত্রণ করে। আঘাত হয়তো কবেই শেষ হয়ে গেছে (ইতিহাস হয়ে গেছে)​। কিন্তু সেই মানুষটা অতীতের আঘাতের জন্য, এখনো ​নিজেকে ভয়ানক ​যন্ত্রণা ​দিয়ে যাচ্ছে।

নিজেকে এভাবে দীর্ঘ্য সময় ধরে যন্ত্রণা দিলে মানুষের​ মস্তিস্ক (শুধু মস্তিস্ক নয়, শরীর এবং মন দুই-ই) দুর্বল হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে ​সেরোটোনিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থের অভাব ​ঘটে। মানুষ ​তখন ​মানসিক অবসাদগ্রস্ত ​হতে পারে।

জীবনে আঘাত আসবেই। ​কিন্তু সেই আঘাতে ​তুমি কতটা যন্ত্রণা পাবে​, ​ তার চাবি কাঠি কিন্তু ​তোমার হাতে। সেই আঘাতে​ তুমি জ্বলে ​ছাই ​হতে ​পারো। বা আঘাতে পুড়ে​ তুমি, খাঁটি সোনার মতো ​দ্যুতিওছড়াতে ​পারো।

অরুণ মাজীর ফেসবুক পেজে, ডিপ্রেশন নিয়ে ডজন ডজন লেখা রয়েছে। চাইলে সেগুলো তোমরা পড়তে পারো।


© অরুণ মাজী
Painting: JWG

​ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে (Depression)
Monday, May 21, 2018
Topic(s) of this poem: bangla,depression,despair,pain,suffering
COMMENTS OF THE POEM
Sucharita Chowdhury 04 November 2018

সত্যিই তাই আঘাত অন্য লোকের হাতে থাকলেও সেই আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নিজের হাতে।

1 0 Reply
??????? ???????? 03 October 2018

খুব ভালো লিখেছেন।আপনার সঙ্গে আমি একমত ।আমার শুভেচ্ছা রইল।

1 0 Reply
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success