যাকে তুমি ভালোবাসো, তার থেকেই তুমি সবচেয়ে বেশী নির্মম আঘাত পাও। তবুও কি তুমি তাকে, ভালোবাসতে ভুলে যাও? না, তুমি তা ভুলে যাও না। তবে তোমরা জিজ্ঞেস করবে- প্রেমিক প্রেমিকা তবে গুঁতোগুঁতি আর ঝগড়া ঝাটি করে, শেষে তারা ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় কেন?
তোমরাই বলো, কেন? ভালোবাসার অভাবে? আপাত দৃষ্টিতে কিন্তু তাই মনে হয়! কিন্তু সত্যিই কি তাই?
না, সত্যিটা তা নয়। যাকে তুমি একবার ভালোবাসো, তাকে তুমি আর ভুলতে পারো না। তুমি যাকে ঘৃণা বলে মনে করো- সেটা হলো আসলে ক্ষোভ, আর প্রতিহিংসা। তাকে তুমি যদি সত্যিই ভুলে যেতে, তাহলে তোমার ক্ষোভও হতো না, আর তোমার মনে প্রতিহিংসার আগুনও জ্বলতো না। সে এখনো, তোমার হৃদয় দখল করে আছে বলেই, তোমার মন আক্রোশে জ্বলতে থাকে। তোমার মনে হতে থাকে- ' আমি ওকে এতো ভালোবাসি, আর ও কিনা আমাকে এতো অবহেলা করে? ' ' আমি ওকে এতো ভালোবাসি, আর ও কিনা অন্য ছেলের সাথে লটর পটর করছে? ' ইত্যাদি। এইসব তোমার মনের মধ্যে আসে, আর তা ভেবে ভেবে, তুমি জ্বলতে থাকো, আর তার উদেশ্যে তুমি- তোমার বিষ ছড়াতে থাকো।
একবার যাকে তুমি ভালোবাসো, তাকে তুমি আর ভুলতে পারো না। তবুও প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ হয়। কেন? জেনে রেখো- প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ কিন্তু ভালোবাসার অভাবের জন্য হয় না। সেই বিচ্ছেদ হয় তাদের গর্ব আর ঔদ্ধত্যের জন্য। তাদের ভ্যানিটি (vanity) -র জন্য।
এদেশে ডাক্তার হওয়ার অনেক বিপদ। আমাকে মাঝে মাঝে, দাম্পত্য জীবনের টুকিটাকি নিয়ে কাউন্সেলিং-ও করতে হয়। আমাকে অনেকেই বলে- 'না, আমি আর এই সম্পর্ক রাখতে পারবো না। ও আমাকে একটুও সন্মান করে না। কেবলই আমাকে dominate করার চেষ্টা করে। ' না, আমি আর এই সম্পর্ক রাখতে পারবো না। আমি যে এতো পরিশ্রম করে, ওকে সুখ দিতে চাই; ও সেটা স্বীকারই করে না। '
আমি তখন তাকে জিজ্ঞেস করি- 'তুমি কি ওকে এখনো ভালোবাসো? '
তো সে আমাকে বলে- 'হ্যাঁ ভালোবাসি। ভীষণই ভালোবাসি। কিন্তু ও তো আমাকে, মানুষ হিসেবে মর্যাদাই দেয় না। '
দেখলে তোমরা? প্রেমিক- এখনো ভালোবাসে তার প্রেমিকাকে। তবুও সে বিচ্ছেদ চায়। কেন? কারন- সে ভাবে, তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই যে আত্মমর্যাদা বোধ, আর তার সেই মর্যাদাতে আঘাত; সেজন্যই প্রায় প্রতিটা বিচ্ছেদ ঘটে।
তাহলে মানুষের কি করণীয়? ভালোবাসলেই শুধু হবে না, তোমাকে- সন্মানও করতে হবে তোমার প্রেমিকাকে, এমনকি তেলও মারতে হবে তাকে। বিশ্বাস করো, আর না করো- সব মানুষই তেল খেতে বড় বেশী ভালোবাসে। (তেল খেয়ে খেয়ে, রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমে, হার্ট এটাক করলেও মানুষ তেল খেতে ভালোবাসে।) এজন্যই যারা একটু তেলুবাজ, তারা খুব ভালো প্রেমিক হয়! প্রেমিক হয়েছো- অথচ তোমার প্রেমিকার চুলের গন্ধের প্রশংসা করবে না, তার নিতম্বের আঁকা বাঁকা রাজপথের প্রশংসা করবে না, তার ঠোঁটের টকটকে লাল রঙের প্রশংসা করবে না- তা কি করে হয়? তা যদি না পারো- তুমি তোমার প্রেমিক চাকরী খুব শীঘ্রই হারাবে। আরও একটা কথা- মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু বেশী তেল খেতে ভালোবাসে! (এজন্যই কি মেয়েদের হাসি একটু বেশী চকচক করে? কে জানে!)
দুটো কাঁচের গ্লাস পাশাপাশি থাকলে যেমন ঠোকাঠুকি হয়, তেমনি দুজন মানুষ পাশাপাশি থাকলে ঠোকাঠুকি হবেই। অনেক সময় তোমার প্রেমিকা- কঠিন কথা বলে, তার ফলের কথা না ভেবেই। সেগুলো হয়তো কঠিন কথা! কিন্তু তোমার তাতে রাগ করলে চলবে না। কারন বেশীরভাগ সময়ই, তোমাকে আঘাত করতে, সে- ওই কঠিন কথা বলে না। ব্যাপারটা অনেকটা- মানুষের মুখ আছে, তাই বলে ফেলে। কি আর করবে বলো? মেনে নাও ভাই, মেনে নাও। কঠিন কথার বিনিময়ে- দু-বার বেশী যদি, তুমি নারীর ঠোঁটের স্পর্শ পাও, তাতে কি খুব বেশী ক্ষতি হবে? আমার মনে হয়- তাতে লাভের অঙ্কই বেশী!
যাক গে, যা বলছিলাম- যাকে তুমি একবার ভালোবেসেছো, সে তোমার হৃদয়ে চিরদিনের জন্য গেঁথে গেছে। তাকে আর তুমি কখনো উৎখাত করতে পারবে না। যাকে তুমি কেবল ছেলেবেলায় ভালোবেসেছিলে, সেও- এমনকি মরণকালে, তোমার স্মৃতির মণি কোঠায় উঁকি-বুঁকি মারবে। বিচ্ছেদ কখনো ভালোবাসার অভাবে হয় না। তা হয়- মানুষের গর্ব আর ঔদ্ধত্যের স্বভাবে।
© অরুণ মাজী
Painting: Amit Bhar
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem
ভীষণ যুক্তি মুগ্ধ রেখে গেলাম প্রিয় কবি